Saturday, December 7, 2013

টুডে ব্লগঃ টিকফার ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ে ওষুধ শিল্প


যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে ওষুধ শিল্পখাত। কারণ, টিকফা চুক্তির একটা বড় প্রস্তাবনা হচ্ছে বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসম্পদ স্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) আইনের কঠোর বাস্তবায়ন। তাই দোহা ঘোষণা ২০০১ অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় ট্রিপস চুক্তি অনুসারে স্বল্পোন্নত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব বিষয়ক বিধিনিষেধ থেকে ছাড় পায়। একই সঙ্গে এ সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে পারছে। এমনকি প্রয়োজন হলে এ সময়সীমা আরও বাড়ানোর কথা ছিলো। কিন্তু ইতোমধ্যে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। এছাড়াও টিকফা চুক্তির কারণে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বড় ফার্মা কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স ব্যয়সহ উৎপাদন খরচ বাড়বে। দাম বাড়বে ওষুধের। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন আয়ের মানুষ। একই সঙ্গে জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত চড়া দামের কারণে ওষুধের অভাবে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগে টিকফা স্বাক্ষর করা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই মেধাস্বত্ব আইন মানতে বাধ্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেই আশংকা করছেন তারা। একই সঙ্গে টিকফা’র ফলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের উপর যে সকল বিরূপ প্রভাব পড়বে তা হলো- মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ তৈরি করতে পারবে না। এই আইনের ফলে পেটেন্টেড ওষুধ বানাতে পারবে না বাংলাদেশ, ফলে বাংলাদেশের অনেক ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ওষুধ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট করা ওষুধ খেতে হবে। 

টিকফা চুক্তির কারণে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বড় ফার্মা কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়বে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বাড়বে। এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেননা দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজ দেশেই তাদের ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ফলে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র ওষুধ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে।

দেশের ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তা ডি-সিক্সটিন ফার্মাসিউটিক্যালস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিনাকি ভট্টাচার্য বলেন, দোহা ঘোষণা ২০০১ অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় ট্রিপস চুক্তি অনুসারে স্বল্পোন্নত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তাও হারাতে হবে। কারণ টিকফায় সে ধরনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি বলে জানান তিনি। 

ট্রিপস চুক্তির ফলে নিশ্চিত ওষুধের দাম জ্যামিতিকহারে বাড়বে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন আয়ের মানুষ। কেননা, দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে। অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত চড়া দামের কারণে ওষুধের অভাবে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান ওষুধ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ও হাডসন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শফিউজ্জামান।

তিনি টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করা ভারত ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পেটেন্ট এর নামে পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানি কিভাবে অবাধ লুণ্ঠনের ধান্দা করে এর মাধ্যমেই বোঝা যাবে। 

অনেক প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে এতদিনে আমাদের ফার্মা সেক্টর তাঁর ভিতটাকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। এখন সময় সেই ভিত্তিটাকে মজবুত করার। আর এখন টিকফা বাস্তবায়ন হলে এতদিনের পরিশ্রমে গড়া আমাদের ফার্মা সেক্টর ধসে পড়বে বলে মনে করেন ওষুধ শিল্প সমিতির সদস্য ও ইউনিহেলথ-ইউনিমেড ফার্মাসিউটিক্যালস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসাইন। 

এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের পরেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত ফার্মা সেক্টর। বর্তমানে বাংলাদেশে ওষুধশিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার এ মুহূর্তে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গার্মেন্টস সেক্টরের পরে এ সেক্টরেই কর্মসংস্থানও বেশি।

এম মোসাদ্দেক জানান, আমাদের দৈনন্দিন এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের শতকরা ৯৭ ভাগই আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোই প্রস্তুত করছে। এ সেক্টরে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি বলা যায়। কেবলমাত্র হরমোন, ভ্যাকসিন এবং এন্টি-ক্যান্সারসহ মাত্র ৩ শতাংশ ড্রাগ আমরা বাইরে থেকে আমদানি করে থাকি। আশার কথা হচ্ছে, কিছু কিছু দেশীয় কোম্পানি এই ওষুধগুলোও প্রস্তুত করা শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশীয় ওষুধের গুণগতমান অনেক ভালো বলেই বিশ্বের ৮০টির অধিক দেশে আমাদের দেশীয় কোম্পানির তৈরি করা ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ এবং দোহা ঘোষণা ২০০১ এর জন্য।

তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স এর মাধ্যমে বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া মনোপলি বাণিজ্য থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশীয় শিল্প। দেশীয় কোম্পানিগুলো ক্রমান্বয়ে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সেসব বিদেশি কোম্পানিগুলোর জায়গা দখল করেছে। তাই অনেক প্রভাবশালী ফার্মা কোম্পানি বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ থেকে তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে। কোন কোন বিদেশি কোম্পানি টিকে থাকার স্বার্থে বাধ্য হয়েছে দেশীয় কোম্পানির সাথে বা অন্য আরও দুই তিনটি বিদেশি কোম্পানির সাথে একীভূত হতে। এ আইনের ফলেই দেশীয় কোম্পানিগুলো আমাদের ফার্মা সেক্টরকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। 

দোহা ঘোষণা ২০০১ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, এ সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন এবং রপ্তানি করতে পারছে। 

তিনি বলেন, এ সুযোগ পাওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই ওষুধ শিল্পে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ সুবিধার জন্যই বিদেশি পেটেন্ট করা ওষুধ আমরা অনেক কমমূল্যে দিতে পারছি মার্কেটে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলোও বাধ্য হচ্ছে ওষুধের দাম কমিয়ে বিক্রি করতে। এতে কম লাভ হলেও তাঁদের কোন লস হচ্ছে না। মেধাস্বত্ব বিষয়ক বিধিনিষেধ এর সময়সীমা ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল।

তবে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ওষুধের পেটেন্ট আইনের আওতার বাইরে রাখার যে দাবি জানিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করা গেলে টিকফা ওষুধ শিল্পের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

কপি-পেষ্টঃ টুডে ব্লগঃ টিকফার ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ে ওষুধ শিল্প

Wednesday, July 3, 2013

সিরাজপত্মী লুৎফুন্নেসা ও তার বংশধর

ইউরোপীয় চিত্রকরের তুলিতে প্রহসনের যুদ্ধের পর ক্লাইভের সামনে অবনত মস্তকে মীরজাফর
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রিয়তমা পত্মী লুৎফুন্নেসা। প্রথমে তিনি ছিলেন সিরাজের মা আমেনা বেগমের একজন হিন্দু পরিচারিকা। তাকে ‘রাজ কুনোয়ার’ বলে ডাকা হতো। তার সৌন্দর্য এবং মধুর ব্যবহারে সিরাজ আকৃষ্ট হন। পরবর্তীকালে সিরাজ তাকে বিয়ে করেন এবং তার নাম রাখেন লুৎফুন্নেসা বেগম।
সিরাজের প্রথম বিবাহ হয় ১৭৪৬ সালের আগস্ট মাসে ইরাজ খান নামে একজন অভিজাত ব্যক্তির কন্যা উমদাতুন্নেসার (বহু বেগম) সাথে। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে সিরাজের কোনো সন্তান ছিল না।
নবাব আলীবর্দী খাঁ ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে রেখে নাতি সিরাজকে গড়ে তুলে ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করিয়েছিলেন নিজের পরিবারে আশৈশব সুশিক্ষিতা পরমা সুন্দরী লুৎফুন্নেসাকে। বিপুল উৎসব আয়োজন করে বিয়ে হয়। লুৎফুন্নেসা বেগম সিরাজের প্রথম সহচরে পরিণত হন। তার প্রথমা স্ত্রী সব সময় আনন্দ-বিলাসেই মগ্ন থাকতেন। পলাশীর বিপর্যয়ের পর সিরাজ একাকী পলায়নের সিদ্ধান্ত নেন; কিন্তু লুৎফুন্নেসা তাকে সঙ্গী করার জন্য আকুল আবেদন জানান। সিরাজ তার এই বিশ্বস্ত স্ত্রী, একমাত্র কন্যা জোহরা এবং একজন অনুগত খোজাসহ ১৭৫৭ সালের ২৪ জুন গভীর রাতে নিভৃতে মুর্শিদাবাদ শহর ত্যাগ করেন।
হতভাগ্য সিরাজ মীরজাফরের ভ্রাতা মীর দাউদের হাতে অচিরেই ধরা পড়েন রাজমহলে। মীরজাফরের জামাতা মীর কাসিম সেখানে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসেন মুর্শিদাবাদে।
সিরাজউদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর মীর কাসিম লুকানো সোনাদানার সন্ধান চেয়ে লুৎফুন্নেসার ওপর অত্যাচার করেন। এ দিকে মীরজাফরের পুত্র মিরনের আদেশে মুহাম্মদী বেগ ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই সিরাজকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মিরনের নির্দেশে তার মৃতদেহ হাতির পিঠে করে মুর্শিদাবাদ নগরে অত্যন্ত অপমানজনক অবস্থায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
স্বামীর শাহাদতের পর সিরাজের তরুণী বিধবা স্ত্রী লুৎফুন্নেসা মীরজাফর ও মিরনের বিবাহ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সারা জীবন স্বামীর কবরে পবিত্র কুরআন শরিফ পাঠ করে সময় অতিবাহিত করেছেন। সিরাজের চরিত্রের ওপর লুৎফা বেগমের বিরাট প্রভাব পড়েছিল। উন্নত চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারিণী লুৎফা সারা জীবন সিরাজউদ্দৌলার প্রতি অনুরক্তা ছিলেন। নবাবের পতনের পর লুৎফুন্নেসা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। লুৎফুন্নেসা খোশবাগে সিরাজের কবরের পাশে একাটি কুঁড়েঘর তৈরি করে বাকি জীবন সেখানেই কাটিয়ে দেন। কত বড় মহীয়সী নারী হলে সব লোভ ও আয়েশ পরিত্যাগ করে জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রাণাধিক প্রিয় স্বামীর স্মরণে কাটিয়ে দেয়া যায়।
তিনি যে মাসোয়ারা পেতেন, তা দিয়ে প্রতিদিন কাঙালি ভোজের ব্যবস্থা করতেন। সুদীর্ঘ ৩৩ বছর এভাবে স্বামীর সেবা করে ১৭৯০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি পরলোক গমন করেন। লুৎফুন্নেসার একনিষ্ঠ প্রেম, ভালোবাসা ও ত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
যাকে নিয়ে এ লেখা, পলাশীর ইতিহাসে তার উপস্থিতি কখনো দীপ্তসরব হয়ে ওঠেনি; কিন্তু পলাশী কখনো তাকে পাশ কাটিয়েও যেতে পারেনি। পলাশীর ২৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। দুর্ভাগা নারী লুৎফুন্নেসা। ইতিহাসে উপেক্ষিতাই রয়ে গেছেন তিনি।
সিরাজকে হত্যা করে নবাব হলেন মীরজাফর। তাকে কথিত নবাব বানালেন কাইভ। সিরাজউদ্দৌলার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ১৫ বছরের মির্জা মেহেদীকে হত্যা করা হলো মীরজাফর ও মিরনের নির্দেশে অন্ধকার কারাগার প্রকোষ্ঠে। কারাগারে বন্দী হলেন সিরাজের মা আমেনা বেগম, নবাব আলীবর্দী খাঁর (১৭৪০-১৭৫৬ খ্রি.) পতœী শরফুন্নেসা, নবাব সিরাজউদ্দৌলার অর্ধাঙ্গিনী লুৎফুন্নেসা এবং তার চার বছরের শিশুকন্যা জোহরা। ঘসেটি বেগমকেও কারাগারে পাঠানো হলো। ঢাকার গা ঘেঁষে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গার ওপারে জিনজিরার প্রাসাদে নির্বাসন দেয়া হলো সবাইকে। নামে ‘প্রাসাদ’, আদতে কয়েদখানার চেয়েও খারাপ।
সিরাজউদ্দৌলার হত্যার পর মীরজাফর সিদ্ধান্ত দিলেনÑ লুৎফুন্নেসা, জোহরা, আমেনা বেগম, ঘসেটি বেগম ও শরফুন্নেসাকে নির্বাসনে পাঠানো হবে জিনজিরায়। ১৭৫৮ সালে নবাব পরিবারের এই সদস্যদের ঠাসাঠাসি করে তোলা হলো একটি সাধারণ নৌকায়। ঢাকায় তাদের খাওয়া-দাওয়া বাবদ সামান্য অর্থ আসতো অনিয়মিত। ফলে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে তাদের। ১৭৬৩ সালে রেজা খানকে ঢাকার নায়েব সুবাদার করা হলো। তিনি নবাব পরিবারের এই নারীদের জন্য সামান্য ভাতা বরাদ্দ করেন। ১৭৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে জিনজিরার বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়ে মুর্শিদাবাদ এলেন লুৎফুন্নেসা, তার কন্যা জোহরা এবং আলীবর্দী খাঁর পতœী শরফুন্নেসা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লুৎফুন্নেসা ও তার কন্যার ভরণপোষণের জন্য মাসিক ৬০০ টাকা বরাদ্দ করেছিল। কাইভের নির্দেশে লুৎফুন্নেসা ও তার কন্যা জোহরাকে মুর্শিদাবাদে আনা হয়েছিল। তার এ নির্দেশের বিরুদ্ধে যাওয়ার দুঃসাহস ছিল না ‘কাইভের গর্দভ’ মীরজাফরের।
পাপীষ্ঠ মীরজাফর ১৭৬৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দুরারোগ্য কুষ্ঠ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণ করেন। এর আগে ১৭৬০ সালের ২৬ জুন মিরন কয়েকজন অনুচরকে পাঠিয়েছিলেন জিনজিরায়। মুর্শিদাবাদে নেয়ার নাম করে দুই বোন আমেনা বেগম ও ঘসেটি বেগমসহ সিরাজের নিকটাত্মীয়দের নৌকায় তুলে বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীর সঙ্গমস্থলে মাঝনদীতে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক মিরনের অনুচর আসফ খাঁ নৌকার তলার খিলগুলো খুলে দিয়েছিল। সলিল সমাধি হয়েছিল বুড়িগঙ্গা নদীতে সিরাজের মাতা ও খালার। এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে ১৭৬০ সালের ৪ জুলাই মীরজাফরের পুত্র মিরনের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছিল।
বিপর্যস্ত জীবনে দুঃখ, বেদনা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে গেল লুৎফুন্নেসার। মেয়ের বিয়ে হলো অতি সাধারণভাবে। জামাই মীর আসাদ আলী খান। জোহরার এক পুত্র ও চার কন্যা। পুত্রের নাম শমসের আলী খান। কন্যাদের নাম সরযুনিসা, আমাতুন নিসা, সাকিনা ও আমাতুল মাহদী। জামাতা মীর আসাদ আলী খান মারা গেলেন হঠাৎ। সামলে উঠতে না উঠতে এলো আরেকটি আঘাতÑ ১৭৭৪ সালে জোহরা চিরদিনের মতো চলে গেলেন। কন্যার মৃত্যুতে এবার লুৎফুন্নেসা ভেঙে পড়লেন। ৬০০ টাকা মাসোয়ারায় পাঁচ-পাঁচটি পিতৃ-মাতৃহারা নাতি ও নাতনীকে নিয়ে জীবন যে চলছিল, তা নয়। কিন্তু একে একে চারজন বিবাহযোগ্যা মেয়ের দেখা দিলো সমস্যা। কোথায় টাকা পাবেন? কে তাকে সাহায্য করবে? উপায়ান্তর না দেখে ১৭৮৭ সালের মার্চ মাসে গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসের কাছে ভাতা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করলেন। বললেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু এবং তার যাবতীয় মালামাল ও সম্পদ লুণ্ঠিত হওয়া ছাড়াও বারবার চরম নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ঝড়-ঝঞ্ঝার প্রবল তরঙ্গ বইয়ে দেয়া হয়েছে আমার ওপর।’ তবু লুৎফুন্নেসার আবেদন নাকচ করে দিলেন কর্নওয়ালিস। ওই ভাতা বাদে মাসে আরো ৩০৫ টাকা পেতেন কুরআনখানি, দানখয়রাত এবং খোশবাগে আলীবর্দী খাঁ ও সিরাজউদ্দৌলার সমাধি দেখভালের জন্য। ১৭৯০ সালের নভেম্বর মাসে স্বামীর কবরের পাশে নামাজরত অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ শয্যা রচিত হলো প্রাণপ্রিয় স্বামীর কবরের পাশে। ইতিহাস এ পর্যন্ত এসে নীরব হয়ে গেছে, থেমে গেছে। এই ভাগ্যহীনা নারীর অসহায় এক নাতি ও চার নাতনীর আর খোঁজখবর রাখেনি কেউ।
ঢাকার জিনজিরার প্রাসাদ কয়েদখানার প্রতিটি ইটে মিশে থাকা লুৎফুন্নেসা, আমেনা বেগম, শরফুন্নেসার বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস, আর্তনাদ ও আহাজারির কান্নার আওয়াজ ইতিহাসের ছাত্র কান পাতলেই শুনতে পাবে। সেই ইতিহাস আমাদের পূর্বপুরুষের অব্যক্ত বেদনার মর্মান্তিক ইতিহাস।
সিরাজউদ্দৌলার একমাত্র নাতি জোহরার পুত্রের নাম শমসের আলী খান। তার একমাত্র পুত্র লুৎফে আলী। ১৮৩৩ সালে তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হন একমাত্র কন্যা ফাতেমা। তার গর্ভে জন্ম নেন তিন কন্যা লতিফুন্নেসা, হাশমত আরা বেগম ও উলফুন্নেসা। ফাতেমা বেগম মারা যান ১৮৭০ সালে। হাশমত আরা বেগমের বিয়ে হয় বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান কুখ্যাত অত্যাচারী দেবী সিংহের পালনকর্তা মোহাম্মদ রেজা খানের ভাই আহমদ খানের অধস্তন পুরুষ সৈয়দ আলী রেজার সাথে। আলী রেজা ও হাশমত আরা যথাক্রমে ১৮৯৭ ও ১৯৩১ সালে মারা যান। তাদেরর পুত্র জাকি রেজা ও কন্যা তিলা তারা বেগম। জাকি রেজা মুর্শিদাবাদের সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। এই পরিবারের দুর্গতির কথা ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর কর্ণগোচর হলে তিনি ১৯১৩ সালে তৎকালীন বাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছিলেন জাকিকে একটি ভালো চাকরি দেয়ার জন্য। জাকি রেজার চার পুত্র গোলাম হায়দার মহসিন রেজা, গোলাম আহমদ, গোলাম মর্তুজা, রেজা আলী এবং দুই কন্যা খুরশিদা বেগম ও মুগরা বেগম। এরা দীর্ঘ সময় মুর্শিদাবাদে ছিলেন। চলে আসেন ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। গোলাম হায়দার ও গোলাম আহমদ বদলি হয়ে চলে যান করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে। রেজা আলী থেকে যান খুলনা কাস্টমে। গোলাম মর্তুজা যোগ দেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসে। সাপ্তাহিক পলাশী (সম্পাদক ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক) পত্রিকায় ১৪ আগস্ট ১৯৯২ সংখ্যায় এক সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সপ্তম বংশধর গোলাম মর্তুজা ৮২ বছর বয়সে গত ১৯ জুলাই ১৯৯২ খ্রি. বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে খুলনার মিউনিসিপ্যাল ট্যাংক রোডে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাকে টুটপাড়া গোরস্থানে ২০ জুলাই দাফন করা হয়। গোলাম মর্তুজার পুত্র গোলাম মোস্তফা একজন ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। আছেন ঢাকায়। অন্য পুত্র গোলাম মোহাম্মদ খুলনাতেই ব্যবসায় করছেন।
খান্দানের বাইরে বিয়ে হয়েছিল সিরাজউদ্দৌলার একমাত্র মেয়ে জোহরার একমাত্র পুত্র শমসের আলী খানের দৌহিত্রী ফাতেমা বেগমের মেয়ে উলফুন্নেসার, মুর্শিদাবাদের সুলতান আমির মির্জার সাথে। তাদের পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা। এক পুত্রের বংশধর সৈয়দ আহমদ মির্জার তিন পুত্র ওয়াসেক আলী মির্জা, ইশতিয়াক মির্জা ও ইমতিয়াজ মির্জা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এরা সবাই খুলনাতেই আছেন। ছোটখাটো চাকরি করছেন কালেক্টরেটে। বাংলাদেশ থেকে কোনো সরকারি সাহায্য বা ভাতা তারা আজ পর্যন্ত পাননি। এ ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাস।
আমাদের জাতীয় জীবনে সিরাজউদ্দৌলার বংশধরেরা আজো অবহেলিত ও উপেক্ষিত। জাতির জন্য সত্যিই এটা চরম বেদনাদায়ক ঘটনা।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলোÑ ইতিহাস থেকে কেউ কিছু শেখে না। 

লেখক : মো: জোবায়ের আলী জুয়েল। সাহিত্য সংগঠক, রংপুর

Wednesday, May 22, 2013

ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক এবং তাদের অধিকার

হযরত আবু খালিদ হিযাম (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন না হওযা পর্যন্ত তাদের কেনাবেচা বাতিল করে দেয়ার অধিকার রাখে। তারা যদি উভয়ে সত্য পথে থাকে তাহলে তাদের কেনাবেচা বরকতপূর্ণ হয়। আর যদি তারা মিথ্যা (বা অসাধু) পথে থাকে, তাহলে তা লেনদেনের বরকত নষ্ট করে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম) [হাদীস নং ৫৯ - রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা-৭২]

Tuesday, May 21, 2013

কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি

প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে আজ সবাই উদ্বিগ্ন। প্রিয় মাতৃভূমির ভবিষ্যত্ রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে সে হিসাব-নিকাশ করছেন সবাই। আগামী নির্বাচন কি আদৌ সব দলের অংশগ্রহণে হবে? এ প্রশ্নটি সবার মনে উঁকি দেয়। নাকি আবার একতরফা নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার মধ্যেই। আর এটা একেবারেই স্বাভাবিক। সরকার এই মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসেও বিরোধী দলের ওপর কঠোর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। সর্বশেষ সবচেয়ে নিরীহ কর্মসূচি মানববন্ধনও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন শুধু বাকি রইল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অফিসে তালা দেয়া। জামায়াতে ইসালামীর অফিসে আরও দুই বছর আগেই তালা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অফিসে তালা দিতে পারলেই হলো। সরকার চাইলে যে কোনো সময় দিতে পারবে। এটা প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতাও এখন আর বিরোধী দলের নেই।

বিরোধী দলের অফিসে তালা দিলে সরকার বিরোধী কথা বলার আর কোনো জায়গা থাকবে না। সবাই নীরবে ঘরে বসে বসে শুধু ভাববেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা একরকম ঘরে বসেই গেছেন। জনসভা ছাড়া আর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় ছাড়া রাজপথে নেতাদের তেমন দেখা যায় না। হরতাল ডাকলে কেউ ঘর থেকে বের হন না। নেতারা বের না হলে কর্মীরা তো আর বের হওয়ার কথা নয়। কর্মীরা যখন দেখে নেতা মাঠে নেই তখন হতাশ হন। হতাশার আগুন জ্বলে কর্মীদের মনে। কর্মীদের মনে তখন প্রশ্ন জাগে, নেতা এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন তিনিই যখন রাজপথে নেই আমরা কেন থাকব! শুধু তাই নয়, কোনো কোনো জেলা ও উপজেলা সভাপতি রয়েছেন যারা হরতাল-অবরোধে কর্মীদের সতর্ক করে দেন রাস্তায় যাতে না নামেন। ওই উপজেলা ও জেলা সভাপতির অধীনস্থ নেতা-কর্মীদের বলে দেয়া হয় এখানে রাস্তায় মিটিং-মিছিল করলে সরকারের পতন হবে না। সুতরাং এখানে কেউ রাস্তায় নামার দরকার নেই। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে যেমন কঠোর, রাজনীতিতেও সরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন, ৪ মে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আলটিমেটামকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিরোধীদলীয় নেতা সেদিন মতিঝিলের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এই ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। এর মধ্যে হরতাল ডেকেও আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে আর কোনো কর্মসূচি নেই। এজন্যই হয়তো ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামকে খোঁচা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখছেন। বিরোধী দলের কোনো পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রীর এসব খোঁচার রাজনৈতিক জবাব দেয়া হচ্ছে না। বিরোধী দলের চরিত্রেও এটা নেই। বিরোধী দলের সব কথাই বলতে হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। আওয়ামী লীগের সুবিধা হচ্ছে শেখ হাসিনা যেই বক্তব্য দেন, দলের সব পর্যায় থেকে তার প্রতিধ্বনী করা হয়। কিন্তু বিরোধী দলের সেই রেওয়াজ নেই। বিরোধী দলের প্রত্যেক নেতাই যেন নিজস্ব রাজনীতি করেন। বক্তব্য দেন নিজের মতো করে। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও কথায় কথায় বিরোধীদলীয় নেতার সন্তানদের কটাক্ষ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করে কথা বলেন। কিন্তু সরকারের প্রায় সাড়ে চার বছরে হাওয়া ভবনের কোনো দুর্নীতি কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লগি-বৈঠার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারও হাওয়া ভবনকে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু এতসব আক্রমণের পরও কার্যকর কোনো রেজাল্ট জাতি এখনও দেখতে পায়নি। জাতির সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি এই হচ্ছে হাওয়া ভবনের দুর্নীতি। আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো কোনো নজির নেই হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তারপরও শেখ হাসিনা এখনও সুযোগ পেলেই হাওয়া ভবন এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। আর এই বক্তব্যের সানাই বাজান আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদাহরণ টানেন মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকারের। বলার চেষ্টা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছিলেন। তার দুই সন্তানকে পাঠিয়েছেন নির্বাসনে। উত্তম-মাধ্যম দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বলা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ছিল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার। কিন্তু তাকেই জরুরি অবস্থার সরকার রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার জারির পর শেখ হাসিনা নিজে গর্ব করে বলেছিলেন, এটা তার আন্দোলনের ফসল। রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসনোট জারি করা হলেও শেখ হাসিনার সঙ্গেই তারা আঁতাত করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। এই সরকারের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। আরও বলে থাকেন ৮ জনকে ডিঙ্গিয়ে মইনউদ্দিনকে সেনাপ্রধান করেছিলেন খালেদা জিয়া। ফখরুদ্দীনকে বিশ্বব্যাংকে থেকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বানিয়েছিলেন। তবে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন সেটা প্রধানমন্ত্রী বলেন না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতির বিষয় ধরা পড়েছে কানাডা সরকারের হাতে। এই দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্ প্রকল্প পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ করা ঋণ বাতিল করেছে। এতে পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। যদিও এই সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের দুর্নীতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং অস্বীকার করেছেন। তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ অন্যরা কীভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রীর অলিখিত ক্যাশিয়ার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। 
এখানে প্রশ্ন রাখতে চাই, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে কী এরকম কোনো দুর্নীতির একটি প্রমাণও রয়েছে? বা সিকি পরিমাণ দুর্নীতির কোনো প্রমাণ গত সাড়ে ৬ বছরে জরুরি অবস্থার সরকার এবং বর্তমান সরকার মিলে বের করতে পেরেছে? তারপরও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে এখনও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির প্রমাণ হাজির করার পরও কিন্তু সেরকম কোনো প্রচারণা নেই। পদ্মা সেতুর এই দুর্নীতির মতো যদি হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে সামান্য পরিমাণ প্রমাণ থাকত তাহলে কী পরিমাণ আওয়াজ উঠত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে! তখন হয়তো বিএনপির পক্ষে আর একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না। আওয়ামী লগি- বৈঠার তাণ্ডবে এবং আওয়ামী মিডিয়াগুলোর প্রচারণায় একদিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হতো না বিএনপির। দুর্নীতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও হাওয়া ভবনকে দুর্নীতির খুঁটি হিসেবে জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের কায়দায় প্রচারণার মাধ্যমে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বাম জোটের এ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের এতবড় দুর্নীতির পরও তারা বড় গলায় কথা বলছেন। আওয়ামী মিডিয়াগুলো এসব বিষয়ে নীরব। 
বিএনপির অফিস থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে ১৫৮ জনকে এক সঙ্গে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে কত লোক নিহত হয়েছেন এবং কত লোক আহত হয়েছেন সেটা নিয়ে গোজবের শেষ নেই। শুধু ফেবু্রয়ারি মাসে ১৭৮ জনকে পুলিশ রাজপথে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশের রিমান্ডে নির্যাতনের রেকর্ড অতিক্রম হয়েছে আরও বহু আগে। গুম করা হয়েছে ইলিয়াস আলীর মতো রাজনৈতিক নেতাসহ আরও অনেক রাজনীতিককে। ক্ষমতায় আসার পরপরই পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৫৭ জন সেনা অফিসার। এত রক্তের দাগ এই সরকারের হাতে, বিশ্ব রেকর্ড করা দুর্নীতির অভিযোগ এই সরকারের বিরুদ্ধে। তার পরও ক্ষমতার শেষ বছরে এসে গোটা জাতিকে একেবারে জিম্মি করে ফেলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন। জামিন পেলেও জেল গেট থেকে আবারও গ্রেফতার। এই নিবন্ধ লিখতে বসার আগে পত্রিকাগুলোর ওয়েবসাইট সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে ৫৩ জনকে জেল গেট থেকে ধরে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। আইনকানুনের কোনো বালাই নেই। ধরে নিয়ে যেতে পারলেই হলো। আদালতে হাজির করলেই রিমান্ড পাওয়া যায়। এত সবের লক্ষ্য একটাই—যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় সরকার। যে কোনো ছুতা-নাতায় জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার গুজবও বাতাসে ভাসছে। এর উদাহরণ রয়েছে নিকট অতীতে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের জরুরি অবস্থার সরকার কোনো সাংবিধানিক সরকার ছিল না। তারা গায়ের জোরে দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার যদি আরও কয়েক বছর জরুরি অবস্থার মধ্যে ক্ষমতায় থেকে যায় অসুবিধা কোথায়! এখন যেভাবে রাজপথে কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে, ভবিষ্যতেও এরকম নিষিদ্ধ থাকবে। এখন যে রকম করে বিরোধী দলের নেতারা রাস্তায় বের হচ্ছেন না, তখনও বের হবেন না। বর্তমান লক্ষণে বোঝা যায় ভবিষ্যতে আরও নির্বিঘ্নে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবে তারা।
সরকারের অনেক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানায়। মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত এবং নামাজ-জিকিররত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযানের গণহত্যার চিত্র ধারণ করায় বন্ধ করা হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন চ্যানেল। সরকারের দুর্নীতি এবং হত্যাযজ্ঞ নিয়ে নীরব আওয়ামী মিডিয়াগুলো। নীরব কথায় কথায় যেই হাইকোর্টে মানুষদের তলব করে অপমান করা হতো সেই উচ্চ আদালত। সবাই যেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী-বাম জোটের তল্পিবাহক হয়ে গেছেন। 
গত কয়েক বছর থেকে সুপ্রিমকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল বিজয়ী হচ্ছেন। বার কাউন্সিলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন সরকারবিরোধী আইনজীবী প্যানেল। তাতে কী কোনো লাভ আছে? আদালতের অনিয়ম ও সরকারের ভাষায় কথা বলার বিরুদ্ধে কি কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছেন তারা! নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করছেন। বিজয়ের সাফল্য এতটুকুই। শুধু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। আমরা সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে ও বার কাউন্সিলে বিজয়ী হয়েছি। যারা বিজয়ী হন তারা নামের সঙ্গে পদবী ব্যবহার করেন। নিজের বায়োডাটায় পদবী যোগ হয়। অথচ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তারা উচ্চ আদালতে আন্দোলনের নামে কি-না করেছেন। প্রধান বিচারপতির এজলাস থেকে শুরু করে ভাংচুর করা হয়েছে আদালত ভবন। শেখ হাসিনার দুর্নীতির মামলা শুনানি করতে গেলে আদালতে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হট্টগোল করা হয়েছে। এখন খুনের মামলার প্রধান আসামিকে বিচারপতি করা হয়, বিদেশে টাকা পাচারের জন্য অভিযোগ ওঠার পরও ৫০ জনকে ডিঙ্গিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপরও কার্যকর কোনো প্রতিরোধ দেখা যাচ্ছে না। এখানেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পার্থক্য।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারের পর দুদকের দুজনকে কানাডায় পাঠানো হয়েছে। আমার এ লেখা প্রকাশের সময় তারা হয়তোবা কানাডায় থাকবেন। যাদের কানাডায় পাঠানো হয়েছে তারা দুজনই হলেন কট্টর আওয়ামী লীগার। এদের একজন হলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আরেকজন হলেন দুদকের আওয়ামী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। আনিসুল হক কখনও কখনও শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হিসেবে ভূমিকা রাখেন সুপ্রিমকোর্টে। দুদকের যেই কর্মকর্তা তার সঙ্গে কানাডায় গেছেন তিনিও আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচিত। তাদের দ্বারা কি কখনও সম্ভব হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচানো যায় সেটাই বরং দুদকের কৌশল! তাদের বিপোর্টের ভিত্তিতে হয়তো এমন একটি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে প্রকাশ করা হবে, যেখানে বলা হবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কেউ জড়িত নন। যেভাবে প্রথমে আবুল হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছিল দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। 
কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গত মঙ্গলবার প্রচারিত পদ্মা সেতু বিষয়ক দুর্নীতির অভিযোগের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি দিয়ে এই তদন্ত হতে পারে। তথাকথিত নিরপেক্ষ ব্যক্তি নয়, প্রফেশনাল এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত যারা করবেন তাদের মাধ্যমে এই তদন্ত করলেই কেবল জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। [সূত্র]

Sunday, May 19, 2013

4 Things You’ll Feel Right Before a Heart Attack

When your body tries to tell you something, how well do you listen?

With many health issues, your body sends out signals that something has gone awry. Of course, listening to your body when it complains that you just ate too much spicy food or you have a minor cold coming on may not be of life-shattering importance. 

However, when it comes to your heart, listening to your body is crucial — because ignoring or misinterpreting these bodily signals can be deadly.

In fact, researchers at Duke University Medical Center have recently determined that unrecognized myocardial infarctions (or “silent” heart attacks, in layman’s terms) are much more common than physicians had previously suspected. And unfortunately, they note these silent heart attacks carry a very high risk of death.

Studies indicate that about 200,000 Americans suffer a heart attack each year without even realizing it. These unrecognized heart attacks account for about one-fourth of all heart attacks, making this a serious public health issue.

Fortunately, according to renowned cardiologist Dr. Chauncey Crandall, you can easily train yourself to listen to your own body’s signals when it comes to the state of your heart health. 

Dr. Crandall recently collaborated with Newsmax Health to make available a special video presentation: 4 Things You’ll Feel Right Before a Heart Attack. In this no-cost video, you’ll see four major ways your body tries to warn you — before it’s too late to intervene and survive the damage.

Because, while they are called “silent” heart attacks, your body will warn you of these impending attacks days, weeks, even months before the actual cardiac events. However, symptoms may be mild, vague, or even painless — and many people don’t even realize they’re heart-related. 

In particular, four things you could feel are the most sinister signs of a silent heart attack. Just don’t expect the stereotypical “Hollywood” heart attack, where you see an actor clutching at the left side of his chest in severe pain. This is actually less common.

When it comes to surviving a heart attack, statistics show a clear link between delay in treatment and disability or death. That’s why knowing what to look for in terms of symptoms is critical, especially when they’re the kind that most people don’t think to associate with a heart attack — like the four things in this complimentary video presentation:4 Things You’ll Feel Right Before a Heart Attack. The video also discusses simple strategies to prevent and reverse general heart disease and high cholesterol.

Dr. Crandall, chief of the cardiac transplant program at the esteemed Palm Beach Cardiovascular Clinic in Florida, practices on the front lines of interventional, vascular, and transplant cardiology. Decades of experience have afforded him the chance to detect little-known warning signs and symptoms like the ones addressed in the video.

http://w3.newsmax.com/newsletters/crandall/video_4things.cfm?promo_code=10E2E-1


Read Latest Breaking News from Newsmax.com http://www.newsmax.com/MKTNews/things-feel-before-heart-attack/2012/10/15/id/464302?PROMO_CODE=10E2E-1#ixzz2Tj4GSk7s
Urgent: Should Obamacare Be Repealed? Vote Here Now!

Tuesday, May 14, 2013

Bringing it all together for Google Apps customers: 30GB shared between Drive and Gmail

Life gets a bit easier when your Google Apps products work well together -- whether that’sinserting a Drive file into an email or sharing Docs and photos from Drive on Google+. As that experience becomes seamless, having separate storage doesn’t make as much sense anymore. So over the coming weeks, you’ll get 30 GB of unified storage to use as you like between Drive and Gmail. Just as before, files created in Docs, Sheets and Slides don't count against your storage quota. Storage will also be shared with photos you upload to Google+ larger than 2048px. 

With this new combined storage, you can use your storage how you need to. If your business or school is like most, you know how many important emails and attachments you receive every day. As a result of today’s storage change, Gmail inboxes for Google Apps customers are no longer limited to 25 GB -- any additional storage you purchase can be shared and used by Gmail. Or alternatively, if you’re only using a few gigabytes of email storage, but have a lot of large documents and files stored in Google Drive, you can now use your storage primarily for Drive. 



We'll also be making updates to the Google Drive storage page, so you can better understand how you're using your storage. Simply hover over the pie chart to see a breakdown of your storage use across Google Drive, Gmail, and Google+ Photos.

This update will roll out to Rapid Release domains over the coming weeks. 

[SourcePosted by Clay Bavor, Director of Product Management, Google Apps]

ইসলামী আন্দোলনের এক বীর সেনানী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান


মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক ময়দান, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রাম, গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতা ও কূটনৈতিক মহলসহ দেশের সর্বত্র একটি আলোচিত নেতৃত্ব। এক কথায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ইসলামী আন্দোলনের এক বীর সেনানী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আজ কামারুজ্জামান একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সংগঠক আজকের সফল রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। বাংলাদেশে আদর্শ ও ইসলামী রাজনৈতিক ধারা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বিগত চার দশক ধরে তার মেধা মনন বুদ্ধি দিয়ে নিরলস পরিশ্রম ও আন্দোলন সংগ্রামে আত্মনিবেদিত এক প্রাণ। ১৯৭০-র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সফল ও মেধাবী ছাত্রনেতা হিসেবে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে মেধার বিকাশ ও গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে এবং দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৮০-র দশকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে অবাধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান যেমন একদিকে সফল রাজনীতিবিদ ও সংগঠক অন্যদিকে একজন সফল সাংবাদিক ও সম্পাদক। তারই সফল সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক সোনার বাংলা আজ বাংলাদেশের শীর্ষে অবস্থানকারী সাপ্তাহিক পত্রিকা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তাই আজ সরকার ও ইসলাম বিরোধী রাজনৈতিক মহলের মারাত্মক অপপ্রচারের শিকার। সরকারের রোষানলে পড়ে দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আজ কারাগারের এক দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন।
যে কথিত অভিযোগে কামারুজ্জামানকে আজ কারাগারে দণ্ড দেয়া হলো। সে অভিযোগের কোনো রকম সত্যতা নেই। শেরপুরসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আজ যে কথিত অভিযোগ আনার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তার মূল কারণ হলো তিনি আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী ও আদর্শিক চেতনার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ। রাজনৈতিক ময়দানে তার অবদান দেশের ইসলাম বিরোধী শক্তির সহ্য হচ্ছে না।  বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির অন্যতম এই সিপাহশালার মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ইসলাম বিরোধী শক্তির এক মহাআতঙ্ক। তাই তার বিরুদ্ধে আজ যুদ্ধাপরাধের কথিত অভিযোগ।
রাজনৈতিক ময়দানে প্রত্য অংশগ্রহণের পাশাপাশি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বাংলাদেশের রাজনীতি, ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলন, গণতন্ত্র ও তার বিকাশ, নির্বাচন, গণমাধ্যম, সমাজ সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর চিন্তা ও গবেষণা করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশে অবাধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও তার কৌশল নিয়ে বেশ কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং সেই বইগুলো পাঠকমহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে। তার সর্বশেষ বই ‘সাঈদ বদিউজ্জামান নুরসী’ সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় বিগত কয়েকমাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালের ৪ জুলাই শেরপুর জেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়া গ্রামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুমরী কালিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পর শেরপুর জিকেএম ইন্সটিটিউশনে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী  পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। অষ্টম শ্রেণীতে তিনি আবাসিক বৃত্তি পান। ১৯৬৭ সালে জিকেএম ইন্সটিটিউশন থেকে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ এসএসসি পরীায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং আবাসিক বৃত্তি লাভ করেন। পুরো শেরপুরে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রজীবন হতেই একজন বিনয়ী ভদ্র অমায়িক মানুষ হিসেবে সর্বজনবিদিত। ১৯৬৭-৬৯ সেশনে জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু দেশে ’৬৯ এর গণআন্দোলন শুরু হওয়ায় পরীায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। ১৯৭১ (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত) সালে মোমেনশাহী নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ বিএ পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন।
শেরপুরের বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব মরহুম কাজী ফজলুর রহমানের আহ্বানে জিকেএম ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। কলেজে পা দিয়েই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি এবং পরে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন। ১৯৭৮ সালের ১৯ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং একমাস পরই নির্বাচনের মাধ্যমে সেশনের বাকী সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮-৭৯ সালেও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে পুন:নির্বাচিত হন।
বিশ্ব মুসলিম যুব সংস্থা (ওয়ামী) এবং বাংলাদেশ সরকারের যুব মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে মৌচাক স্কাউট ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে তিনি প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন শেরপুরের আরেক কৃতী সন্তান মরহুম খন্দকার আব্দুল হামিদ। উলেখ্য যে, এই সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন।
ছাত্র জীবন শেষে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলা মাসিক ‘ঢাকা ডাইজেস্ট’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮১ সালে তাকে সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোনার বাংলায় ুরধার লেখনির কারণে এরশাদের শাসনামলে পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়। তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে কতিপয় ব্যক্তির সহযোগিতায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নতুন পত্র’ প্রকাশ করেন, অবশ্য এ পত্রিকাটির প্রকাশনা বর্তমানে বন্ধ আছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দশ বছর দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জাতীয় প্রেস কাবের একজন স্থায়ী সদস্য এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি কিছুদিনের জন্য ঢাকা মহানগরী জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে তাঁকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেয়া হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি সময় দেবার প্রয়োজনেই ১৯৯৩ সালে তিনি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি জামায়াতের অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কমিটি ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে বিগত স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৯৮৩-৯০ পর্যন্ত তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে তিনি জামায়াতের নির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও বিভিন্ন কমিটির সদস্য এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মতায় আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দেয়। এ সময় তিনি ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য গড়ে তোলায় দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছেন, যা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। চারদলের কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসাবে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য প্রচেষ্টায় তিনি অকান্ত পরিশ্রম করেছেন। [সূত্র]